আলেয়া (দ্বিতীয় পর্ব)
(২০১৩ সালে হেনা ভাইয়ের পাঠানো “স্বপ্ন বাসর” উপন্যাস পড়ে সেই রাতেই লেখা ছড়াটি অনেক লম্বা হওয়ায় তিন পর্বের দ্বিতীয় পর্ব পোষ্ট করা হলো)
শহীদুল ইসলাম প্রামানিক
একাত্তর সালে যুদ্ধের সময়
এলাম যখন গাঁয়ে
শহরে থাকায় বুঝি নাই কিছু
বুঝালো পালক মায়ে।
মোর পাশে পাশে ঘোরাঘুরি করে
তুমি বুঝালে সব
তরুণ বয়সে পেয়ে তোমাকে
করেছি কত উৎসব।
দাদা, চাচা-চাচি, দাদিজান মোর
সকলের মুখে মুখে
মোদের বিয়ের শুভ কথা শুনে
কত আশা ছিল বুকে।
পেয়েছিলাম যেন স্বর্গের সুখ
তোমাকে কাছে পেয়ে
জানা ছিলনা ক্ষণিকের সুখে
দুঃখ আসে পিছু ধেয়ে?
যুদ্ধ তখনও শেষ হয়নি
শহরে এলাম ফিরে
আসার সময় কি যে কষ্ট
কাকে দেখাই বুক চিরে?
কিছুটা কষ্ট হয়তো বুঝেছিল
অতি বৃদ্ধ দাদা মোর
প্রেমের নেশায় বুঝিনি তাকে
তখনও কাটেনি ঘোর।
মনে মনে খুব রাগ করেছিলাম
দাদার কথার পরে
প্রতিবাদ করার ছিলনা সাহস
তার ধমকের ডরে।
বিদায়ের কালে দোহেকে জড়ায়ে
সেই অন্ধ দাদাজান
হাত বুলিয়ে দোয়া করেছিল
কেঁদেছিল মোর প্রাণ।
দুইজনের হাত এক করে দিয়ে
মোদের মঙ্গলের তরে
বলেছিল কেঁদে, “তোদের মিলন
এই তো পাঁচ বছর পরে”।
‘বিয়ের পরে কি করে খাবি
লেখাপড়া করা ছাড়া?
চাকরি করার যোগ্য হয়ে নে–
তাই বিয়েতে নাই তাড়া’।
আলেয়াকে ডেকে বলেছিল হেঁকে,
“ম্যাট্রিকটা পাশ কর,
কেমনে করবি লেখাপড়া ছাড়া
এতো শিক্ষিতের ঘর”?
বাবা চাচাকে শপথ করিয়ে
বলেছিল পাকা কথা
‘মরি বা বাঁচি জুটি মিলে দিয়ো’
ঘর ছিল নিরবতা।
আরো বলেছিল ধমকের সুরে,
‘কথা যদি হয় নড়চড়
কখনো দাঁড়াবে না কবরের পাশে
মোর মরণের পর’!
সে সব কথা মনে আছে মোর
কিন্তু তুমি তো নাই
দাদার কবরে আজো বসে বসে
কাঁদাকাটি করি তাই।
চোখ ছলছল মনে পরে আজো
বিদায়ের সেই ক্ষণ
সব ছবি যেন আজো ভাসে চোখে
কেঁদে উঠে তাই মন।
দাদার কথায় লেখাপড়া করে
কলেজের পাট চুকে
উচ্চ শিক্ষার বড় আশা মোর
ভার্সিটিতে যাবো ঢুকে।
অনাকাংখিত এক ঘটনা ঘটায়
পুলিশ করিল তাড়া
গ্রেফতারের ভয়ে পালিয়ে গেলাম
হলাম এলাকা ছাড়া।
(চলবে)
(গ্রামের বাড়ি থাকায় এতদিন লেখাটি পোষ্ট করা সম্ভব হয় নাই বলে সবার কাছে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি।)
Recent Comments