আলেয়া (তৃতীয় পর্ব)

(২০১৩ সালে হেনা ভাইয়ের পাঠানো “স্বপ্ন বাসর” উপন্যাস পড়ে সেই রাতেই লেখা ছড়াটি অনেক লম্বা হওয়ায় তিন পর্বের শেষ পর্ব পোষ্ট করা হলো)

শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

অনাকাংখিত এক ঘটনা ঘটায়
পুলিশ করিল তাড়া
গ্রেফতারের ভয়ে পালিয়ে গেলাম
হলাম এলাকা ছাড়া।

বিনা কারণেই জেলে যেতে হলো–
ভাগ্যের নির্মম পরিহাস
দাদার পরেই মা মরে গেল
দেখতে পাইনি লাশ!

মরণের সময় পালক মা মোর
খুঁজে ফিরেছে মোরে
জেলে থাকাতে পাইনি খবর
মনে হলে কাঁদি জোরে।

জেল খানাতেই সব হারালাম
তুমি হারালে মা
এখানেই যেন নিষ্ঠুর নিয়তির
শুরু হলো খেলাটা।

তোমাদের ঘরে এলো সৎমা
আমি তো তখন জেলে
ডাইনি তোমাকে কত যে মারতো
পায়ের নিচে ফেলে।

মাঝে মাঝে তোমায় লম্বা চুল ধরে
দিত যে লাথি, কিল
অনাহারে রেখে মার দিত বলে
বুকে লাগত খিল।

হুশ হারা হয়ে পরে যেতে দেখে
ছোট চাচি যদি যেত
তোমাকে ধরাতে অকথ্য ভাষায়
সেও বকুনি খেত।

এত নির্মম ছিল সৎ মা
দিত না খেতে ভাত
চাইলে পরেও না খেতে দিয়ে
গায়ে তুলত হাত।

সৎমায়ের সেই নিষ্ঠুরতায়
দাদাজানের কথা ভুলে
তড়িঘড়ি করে চাচাজান তোমায়
অন্যের হাতে দিল তুলে।

এত পাকা কথা এত যে শপথ
কিছুই আসিল না কাজে
দূর থেকে দূরে যেতে হলো সরে
দেয়াল উঠিল মাঝে।

কিছুদিন পরে সাপের কামড়ে
মরে গেল সেই ডাইনি
আমার অজান্তেই ঘটে গেল সব–
আমি তো এসব চাইনি?

যাকে চেয়েছি তাকে দূরে ঠেলে
ঘটনা ঘটে গেল কত
মনে হলে আজো বুক ফেটে যায়
কাঁদি তাই অবিরত।

জেল থেকে ফিরে ভাল লাগে না
দুর্বল কায়া মোর
হাঁটতে গেলে মাথা ঘুরে পরি
শরীরে নাহি জোর।

তোমার কথা জিজ্ঞেস করি যারে
উত্তর দেয়না কেহ
গাঁয়ে যেতে চাই যেতে বাধা দেয়
দুর্বল নাকি দেহ?

বাপেরে ধরে কেঁদেকেটে শেষে
গিয়েও হলো না দেখা
পেয়েছি তোমার শেষ চিঠিখানি
দুটি কথা আছে লেখা।

‘মেজ ভাই তুমি ক্ষমা করে দিও
হলো না ম্যাট্রিক পাস’
চিঠিখান পড়ে মুখে কথা নাহি
শুধু যে দীর্ঘশ্বাস।

দাদার কবরে দাঁড়ায়ে দাঁড়ায়ে
কেঁদেছি কতক্ষণ
কথা রাখেনি বাপজান মোর
তারও ব্যাথিত মন।

শপথের কথা মনে করে বাবা
কবরের কাছে না এসে
দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কিছুক্ষণ থেকে
কেঁদে উঠে অবশেষে।

আমিও কেঁদেছি, বাবাও কেঁদেছে
কেঁদেছে পাড়া প্রতিবেশি
চাচা-চাচীরাও ডুকরে কেঁদেছে
ছিল না তো রেষারেশি।

অনেক ব্যাথা বুকে নিয়ে আজো
বেঁচে আছি ঠিক আমি
ভুলিতে চেয়েও ভুলিতে পারিনি
কাঁদি তাই দিবাযামি।

হয়তো তোমায় পাবো না তো আর
হবে না কভু দেখা
আমার হয়েও হলে না আমার
এ যে ললাটের লেখা।
-০- সমাপ্ত -০-

Loading

Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *