সেকালের সেহরী
শহীদুল ইসলাম প্রামানিক
আগের দিনে আমরা যখন
সেহরী খেতে উঠতাম
বিজলী ছাড়াই অন্ধকারে
এঘর ওঘর ছুটতাম।
ঘড়ি ছিল না মাইক ছিল না
ছিল আকাশ তারা
মধ্য তারার দিক নির্নয়ে
সেহরী হতো সারা।
তিন প্রহরে মোরগগুলো
পাখা ঝাপটিয়ে ডাকতো
কুক-কুরু-কু শব্দ শুনে
পাড়াশুদ্ধ জাগতো।
“জাগো জাগো, জাগো সবাই”
কেউবা ধরতো গান
গভীর রাতে গ্রামগুলো যে
পেত নতুন প্রাণ।
বুড়োগুলোর কাশির শব্দে
শিশুরা উঠতো জেগে
কান্নাকাটি করলে মায়ে
ধমকে দিত রেগে।
শীতের রাতে বাসি তরকারী
জমাট বাধা ঝোল
বোয়াল মাছের পেটি দেখে
ছাড়তাম মায়ের কোল।
গরম ভাতে ঝোল মাখিয়ে
খেতে কি যে স্বাদ!
ওসব যারা খাইনি কভু
জীবটাই বরবাদ।
শীতের চোটে কাঁপতে কাঁপতে
খেতাম পাটিত বসে
খাওয়ার শেষে দুধমাখা ভাত
খেতাম মনের জোসে।
মাঝে মাঝে ঘুমের চোটে
উঠতে হতো দেরি
পূবাকাশে ফর্সা হতো
খাওয়া হতো না সেহরী।
ফর্সা হলেও কেউবা আবার
ঘরে দুয়ার দিয়ে
হাপুর-হুপুর ডাল-ভাত খেত
কুপির আলো নিয়ে।
খাওয়ার পরে পানি খেতে
যদি আজান দিত
ঢোক না গিলেই পানি ফেলে
নিয়ত করে নিত।
ওই অবস্থায় রাখতো রোজা
ঈমান ছিল খাঁটি
রোজা ভাঙলেই মনে করতো
পরোকালটাই মাটি।
সেহরী শেষে আজান দিলে
নামাজ পড়ার তাড়া
জল চৌকির পর দাঁড়িয়ে যেত
নামায পড়তো যারা।
মসজিদ অনেক দূরে থাকায়
নামায পড়তো ঘরে
নামায শেষে দরুদ পড়তো
গুণগুণ মধুর স্বরে।
ভোর বেলার ঐ দরুদ গুলো
শুনতে লাগতো ভালো
এসব করতেই সুর্য্য উঠতো
ছড়িয়ে দিয়ে আলো।
সেসব দিনের সেহরীর কথা
আজো মনে হলে
আধুনিক আর ভাল্লাগেনা
তাইতো মনটা দোলে।
বাপ-চাচারা রোজা রেখেই
মাঠে করতো কাজ
রোজা ছাড়লে সেই সময়ে
সবাই দিত লাজ।
ছবিঃ গুগল
Recent Comments