দগ্ধ হৃদয় (অষ্টম র্পব)
ইসহাক আলী প্রামানীক
পরদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে হাতমুখ ধুয়ে অন্য দিনের মতই নদীর পাড়ে ঘুরে আসার জন্য প্রস্তুত হলো। কিন্তু ঘর থেকে বের হতে গিয়ে গত রাতের করিম মিয়ার কথা মনে পরে গেল। তাই আর সে নদীর পারে যাওয়া থেকে বিরত থাকলো কারণ হাসিনাদের বাড়ীর সামন দিয়েই নদীর পারে যাওয়ার রাস্তা। যদি পথে করিম মিয়া সামনে পরে যায় কিছু যদি বলে অতএব যাওয়া যাবে না। তাই পড়ার টেবিলে বই নিয়ে বসে পড়লো। কিন্তু মনটা বসছে না পড়ায়। তবু মনকে জোড় করে বইয়ের ভিতর ডুবিয়ে রাখলো।
এক ঘন্টা এভাবে কাটিয়ে দিল সে। পরে মায়ের ডাকে নাস্তা খেতে উঠে পড়লো। ইনামুলের আব্বা নাস্তা খাচ্ছিলেন। ইনামুল নাস্তা খেতে বসে পড়লো, ওর আব্বা খাওয়া শেষ করে উঠে পড়লো। ইনামুলের মা ইনামুলের চোখ মুখ দেখে, বলে উঠল কি রে তোর চোখ মুখ যে পান্ষা বর্ণ হয়েছে, মুখ শুকিয়ে গেছে। রাতে ঘুমোসনি তুই। তোর কি হয়েছে। ইনামুল একটু ততমত খেয়ে ইতস্ত করলো।
পরে জবাব দিলো-
মা শরীর টা যেন কেমন কেমন করছে, ভালো লাগছেনা তাই আর কি?
-জ্বর হয়নি তো ? তাই বুঝি ঘুম কম হয়েছে তাইনা।
– মনে হয় তাই মা। ওই জন্যই ঘুম ভালো হয়নি। এখন আবহাওয়া ভালো না। তাই অসুখ করতে পারে বুঝলি ?
কোন রকম ছাড়া পেয়ে বিছানায় এসেই শুয়ে পড়লো ইনামুল। আর সাথে সাথেই ইনামুল ঘুমিয়ে পড়লো। ঘুম থেকে উঠে দেখে বেলা প্রায় ১২টা বাজে। এখন সে গোসল করে খেয়ে নিল। বিকালে সে বাইরে বেড়োনোর চেষ্টা করলো। ইনামের মা ধমক দিলো বললো অসুখ শরীর নিয়ে কোথাও যেতে হবে না। যাও ঘরে শুয়ে থাকো।
-অগত্য ঘরে বিছানায় শুয়ে আবোল তাবোল করে সারা দিন কাটাতে হলো।
হাসিনা ইনামের আসার অপেক্ষা করতিছিল। কিন্তু ইনামকে না পেয়ে মনে করলো নিশ্চয় ওকেও কিছু বলেছে, নইলে ও নিশ্চয় সকাল না হয় বিকালে অবশ্যই একবার আসতো দেখা করতে। আজ সন্ধ্যা হয়ে গেলো তবু একবারো আসলো না কেন? আমি যাবো ওদের বাড়ীতে কিন্তু চাচার আদেশ বাড়ী থেকে বেড় হওয়া মানা। এখন আমি করি কি? রাত্রী গভীর হলো তবু যখন ইনামুল আসছে না তখন হাসিনার মনে দৃঢ় বিশ্বাস জন্মালো যে নিশ্চয় চাচা ইনামুলকে শাসিয়েছে। তখন অনেক চিন্তা করে ঠিক করলো শাহীনকে দিয়ে চিঠি পাঠাতে হবে।
পরের দিন সকালে ঘুম থেকে উঠে মায়ের কক্ষে প্রবেশ করল। তখনও শাহীন ঘুম থেকে জেগে উঠে নাই, শাহীনকে ঘুম থেকে ডেকে বলল, তুই আমাকে একটা কাজ করে দিতে পারবি?
-কি কাজ ?
-তোর ইনামুল ভাইকে একটা পত্র দিতে হবে।
-অবশ্যই পারবো তবে আমাকে টাকা দিলে,
-ঠিকা আছে যা দরকার তাই দেবো।
-তারপর তার হাতে টাকা দিলো এবং একটা পত্র দিলো।
-যদি এখন ইনাম ভাই ঘরে না থাকে তবে কি অন্য কাঊকে দিয়ে আসবো ?
-সর্বনাশ একাজ করবি না। কেউ যেন টের না পায়।
ও না থাকলে চলে আসবে।
-আচ্ছা ঠিক আছে।
তারপর শাহীন চলে দেল। বাড়ী গিয়ে দেখে ইনামুলের ঘরের দরজা খোলা। ভিতরে গিয়ে দেখে ইনাম ভাই নেই। তা এখন কি করবে বুঝতে পারছেনা। পরে চিন্তা করে বালিশের নীচে পত্রটা রেখে শাহীন চলে এলো।
-কিরে তাড়াতাড়ি চলে এলি যে। ঠিকমত দিয়েছিস তো।
-ইনামুল ভাই ঘরে নেই, মনে হয় বাইরে হাটতে গেছে।
-তা হলে পত্র কাকে দিলি?
-ভয় নেই, আমি ওর বালিশের নীচে রেখে এসেছি।
-বেশ করেছিস্ তা এখন ভাই হাতমুখ ধুয়ে পড়তে বোস।
ওদিকে ইনামুল বাড়ীর দক্ষিণ পাশে খোলা মাঠে বেড়াতে গিয়েছিল। সেখান থেকে ফিরে হাতমুখ ধুয়ে ঘরে প্রবেশ করলো। ঘরে ঢুকে দেখতে পেল তার বালিশটা অনেকটা সরা নড়া হয়ে আছে। তখন সে বালিশটা তুলে ঠিক করতে গেল। দেখে বালিশের নীচে একটা সাদা কাগজ ভাজ করা। কাগজটা হাতে নিয়ে খুলে দেখতে পেল হাসিনার লেখা পত্র। এতো সকালে হাসিনা এলো কোথা থেকে? সে এসেছিল বলে মনে হয় না। তাহলো কে রেখে দিয়ে গেল এই পত্র। পড়ে দেখি কি লিখেছে এতে। পত্রটা মনোযোগ দিয়ে পড়লো ইনামুল। রাতের ঘটনার বিষয়টি সম্পূর্ণ ভাবে জানতে পারল সে। শাহীনের মাধ্যমে পত্রটা পাঠিয়ে সেটাও জানতে পারলো সে।
পত্রে হাসিনা রাতে অতি গোপনে ইনামুলকে দেখা করতে বলেছে। যাতে করিম চাচা ঘুনাঅক্ষরেও টের না পায়। তাই বাড়ীর পিছন দিয়ে বাড়ীতে প্রবেশ করতে হবে এবং রান্না ঘরের পাশে চোরা গেট দিয়ে প্রবেশ করতে হবে। ওই গেটটি সে খুলে রাখবে।
এত শাসনের পরেও হাসিনা তাকে দেখা করতে বলেছে তার মানে কি? সে কি সত্যি আমাকে মন প্রাণ দিয়ে ভালোবাসে ? এতো কঠিন ভালবাসার তো ফলকি আমরা জীবনে পাবো না। দুজনের হৃদয় দিয়ে- ভালোবাসা কোন দিনও বৃথা যেতে পারে না। কথায় আছে ইচ্ছা থাকলে একদিন উপায় হয়। তাই মনে করি আমাদের ইচ্ছাও নষ্ট হবে না। আমরা অবশ্যই ভালোবাসার বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে সুখে সংসার করতে পারবো।
হে খোদা তোমার অপার লিলা তুমি সবকিছু জানো। সব অসম্ভবকে সম্ভব করে দিতে পারো একমাত্র তুমিই। তাই তুমি পারো আমাদের সাধনা, আমাদের আশা পূর্ণ করতে। তবে তুমি আমাদের কাছে মহান, তাই তোমাকে আমরা স্মরণ করি অন্তর দিয়ে।
চলবে—–
Recent Comments