জ্বীনের বাদশা

পবন সরকার

রাত তখন সাড়ে বারোটা। ইউটিউবে জ্বীনের বাদশার ভিডিও দেখে মাত্র শুয়ে পড়েছি। হঠাৎ মোবাইল বেজে উঠল। চমকে উঠলাম। এত রাতে কে আবার ফোন করল! ভয়ে ভয়ে ফোন ধরতেই অপর প্রান্ত থেকে সালাম দিয়ে কোরান হাদীসের আয়াত পড়ে বয়ান করতে লাগল। কণ্ঠ মানুষের মত স্বাভাবিক নয় কিছুটা বিকৃত ধরনের ক্যানক্যানে গলা। আমি অন্ধকার ঘরে একা একা শুয়ে আছি। ভয়ে চুপসে গেলাম। মুখ দিয়ে কথা বেরুচ্ছে না। চুপচাপ শুনছি আর তার কথার উত্তরে হুঁ হুঁ করছি।
অনেক ক্ষণ বলার পরে আমাকে উদ্দেশ্য করে বলল, বাবা তুই কি আমার কথা শুনতে পারছিস বাবা?
— জী শুনতে পারতেছি।
— আলাহামদু লিল্লাহ আলাহামদু লিল্লাহ। তা বাবা– আমি তো সবার সাথে কথা বলি না যার উপরে আল্লাহর হুকুম হয় তার সাথেই একমাত্র কথা বলি। তা বাবা আমি তোকে কিছু উপদেশ দিব তুই উপদেশগুলা মেনে চলতে পারবি বাবা?
— জী বলেন।
— বাবা, কথা হলো ঈমান ঠিক রাখবি, পাঁচ ওয়াক্ত নামায পড়বি, রোজা রাখবি, হারাম হালাল বেছে চলবি, পারবিনা বাবা?
— জী বলেন।
— এসব পালন করার পর আরেকটা কাজ করবি বাবা?
— কী কাজ?
— সামনের শুক্রবারে দশ জন মিসকিনকে মসজিদে গিয়ে জুমার নাময পড়ে খাওয়াবি। পারবিনা বাবা?
— জী বলেন।
— তার পরের শুক্রবারে হক্কানী পীরের মাজারে গিয়ে এক শ’ জন ফকিরকে সিন্নি দিবি। পারবিনা বাবা?
— জী বলেন।
— এই কাজগুলা করলে আল্লাহর তরফ থেকে তোর কিছু বরকত হবে। আল্লাহ তোকে ধনী করার মনস্থ করেছে। তুই কিছু গায়েবী ধন পাবি।
গায়েবি ধনের কথা শুনে কিছুটা আগ্রহ জন্ম নিল। ছোটকালে এমন গল্প অনেক শুনেছি। কিন্তু কেউ বাস্তবে পেয়েছে কি না তা চোখে দেখিনি। আজ সেই গায়েবি ধন পেতে যাচ্ছি। ভয় কেটে গিয়ে কিছুটা আগ্রহ দেখা দিল। বললাম, কিভাবে পাবো?
— সেই কাজটা আমরা করে দিব বাবা।
— আপনাকে চিনবো কি করে?
— আমাকে তুই চিনতে পারবি না বাবা। আমরা মানুষ নই আমরা জ্বীন জাতি। আমরা আকাশে বাতাসে ঘুরে বেড়াই।
জ্বীনের নাম শুনেই চমকে উঠলাম। আমি তো একটি আগে জ্বীনদের ভিডিও দেখতেছিলাম। আমার ঘরে আমি ছাড়া তো আর কেউ নেই। আমার ভিডিও দেখার বিষয়টি তো আর কেউ জানার কথা নয়। জ্বীনেরা কি তাহলে গায়েবি ভাবে ভিডিও দেখার বিষয় জেনে গেল? ভয়ে কাঁপতে লাগলাম। কাঁপতে কাঁপতে বললাম, তাহলে গায়েবী ধন কিভাবে পাবো?
— গায়েবী ধন পেতে হলে তোকে উপরের কাজগুলা করতে হবে, পারবিনা বাবা?
— আমার তো অত লোক খাওয়ানোর সামর্থ নাই।
— তাহলে তোকে আরো সহজ করে দিচ্ছি বাবা।
— সহজ কাজটা কি ভাবে করবো?
— আগামী পুর্ণিমা রাতে একটা মসজিদে যেতে হবে, সেই মসজিদের বারান্দায় একজন সবুজ পাঞ্জাবী পরা লোক বসে থাকবে। তার হাতে পাঁচ হাজার এক টাকা দিতে হবে– পারবিনা বাবা?
— সেই মসজিদটা কোথায়?
— সেই মসজিদটার ঠিকানা আমি দিব বাবা, তার আগে তোকে খোদার কসম কাটতে হবে এই কথা দুনিয়াতে কাউকে বলতে পারবি না। এমন কি তোর বাবা মা স্ত্রীর কাছেও না। যদি বলিস তুই গায়েবি ধন তো পাবিই না উল্টো আরো তোর জান মালের ক্ষতি হবে। তোর জান মালের নিরাপত্তার জন্য হলেও কসম কাটতে পারবি না বাবা?
— আমি তো খোদার নামে কসম কাটতে পারবো না।
— কেন বাবা?
— আমি তো হিন্দু।
— মিথ্যা কথা বলিস না বাবা। তোর ভাগ্য কিন্তু কোটিপতির খাতায় লেখা আছে। মিথ্যা বললে ভাগ্য বিপরীত হবে বাবা। মিথ্যা কথার জন্য দুনিয়াতে অছিরেই ধ্বংস হয়ে যাবি বাবা। তুই নাফরমানি না করে আল্লাহর হুকুম পালন কর। আল্লাহ তোকে অছিরেই সম্পদশালী করবে। তুই ধনে জনে সুখী হবি। আর তুই আল্লাহর সাথে নাফরমানি করবি তো অভাব অনটনে পড়ে ধ্বংস হয়ে যাবি।
— মিথ্যা বলছি না আমি আসলেই হিন্দু।
— আলাহামদু লিল্লাহ আলাহামদুলিল্লাহ। বলেই মোবাইল কেটে দিল।
আমি সত্যি সত্যি জ্বীন মনে করে ভয় পেয়েছিলাম। হিন্দু বলায় মোবাইল কেটে দেয়ার পরও অনেক ক্ষণ ধান্দা লেগে বসে ছিলাম।
সকাল বেলা মোবাইলটা ঘরে রেখে বাইরে হাঁটতে গিয়েছি, ফিরে এসে দেখি আমার ক্লাস ফোরে পড়া ভাতিজা মোবাইল খুলে ওর সিম লাগিয়ে বন্ধুদের সাথে হ্যালো হ্যালো করছে। আমার সিম লাগানোর পরে আর জ্বীনের নাম্বার খুঁজে পেলাম না।

(ছবি ইন্টারনেট)

Loading

Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *